ঈমান ও আকিদা শব্দের ব্যাখ্যা। ঈমানের গুরুত্ব। ঈমানের ফজিলত। যেসব বিষয়ে ঈমান রাখতে হবে

ঈমান ও আকিদা শব্দের ব্যাখ্যা


"ঈমান" শব্দের  অর্থ বিশ্বাস করা ও স্বীকার করা।কুরআন-হাদিসে যে বিষয়টি বিশ্বাস করতে বলা হয়েছে সে গুলোকে অন্তরে বিশ্বাস করা  এবং মুখে তা স্বীকার করাই হল ঈমান। এককথায় ইসলামের ধর্মীয় বিশ্বাসকে বলা হয় ঈমান।
আকিদা শব্দের অর্থ কোন বিষয়ে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা।(ঈমান কি)
ঈমান


ঈমানের গুরুত্ব
ঈমান হচ্ছে সমস্ত আমলের বুনিয়াদ।যার ঈমান নেই তার কোনো আমল সহিহ হয় না,কবুল হয় না।
কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে
"যারা কাফের তাদের আমলসমূহ মরূভূমির মরীচিকার ন্যায়"
যার ঈমান নেই সে পরকালে কোনো আমলের সাওয়াব পাবে না।

ঈমানের ফযিলত
আল্লাহু রব্বুল আলামিন সূরা বাকারাহ শুরুতে পারহেযগার মানুষ এর পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন
"যারা ঈমান ও আমলের উপর থাকে তারাই হেদায়েত প্রাপ্ত তারাই কামিয়াব বা সফলকাম"।
হযরত আবূ যর রাযি. থেকে বর্ণিত মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন "যে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে এবং এর উপর মৃত্যু হবে সে জান্নাতে যাবে"

যেসব বিষয় এর উপর ঈমান রাখতে হয়
মৌলিক ভাবে ৬ টি বিষয় এর উপর ঈমান রাখতে হয়

১.আল্লাহর প্রতি ঈমান
২ক্সক্স,এক্স.ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান
৩.নবী-রসূল এর প্রতি ঈমান
৪.আখিরাতের প্রতি ঈমান
৫.আসমানি কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান
৬.তাকদিরের প্রতি ঈমান


আল্লাহর প্রতি ঈমান
আল্লাহ তায়ালার উপর ঈমান বলতে মৌলিকভাবে ৩ টি বিষয় এর উপর বিশ্বাস রাখাকে বোঝায়

ক.আল্লাহর সত্তা ও তার অস্তিত্বে  বিশ্বাস করা
খ.আল্লাহর গুণাবলীতে বিশ্বাস করা
গ.তাওহীদ অর্থাৎ একত্ববাদ এ বিশ্বাস করা

আল্লাহর সত্তা ও তার অস্তিত্ব বিশ্বাস করা যে আল্লাহ আছেন,যিনি সারা বিশ্বকে সৃষ্টি করেছেন।যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে না তারা কাফির বা নাস্তিক। 

ফেরেশতা সম্বন্ধে ঈমান
ফেরেশতা সম্বন্ধে আমাদের সবাইকে এই বিশ্বাস রাখতে হবে যে,আল্লাহ তায়ালা এক প্রকার নূরের মাখলূক সৃষ্টি করেছেন,তারা পুরুষ ও নন আবার নারী ও নন।তারা নিষ্পাপ।
তারা আল্লাহর আদেশের বিন্দুমাত্র ব্যতিক্রম করেন না।তারা বিভিন্ন আকার ধারন করতে পারেন এবং তারা সংখ্যায় অনেক।তারা আল্লাহর আদেশ পালনে নিযুক্ত আছেন।ফেরেশতাদের মধ্যে চারজন প্রধান

১.জিবরাইল ফেরেশতা
২.মীকাইল ফেরেশতা
৩.ইসরাফিল ফেরেশতা
৪.আজরাইল ফেরেশতা

নবী-রসূল সম্বন্ধে ঈমান
নবী-রসূলগন নিষ্পাপ। তাদের  দ্বারা কোনো পাপ হয় না।নবী-রসূলগন খোদার পুত্র নন।নবী-রসূলগন আল্লাহর বাণী পৌঁছে দিয়েছেন।নবীদের সর্ব প্রথম আদম আঃ এবং সর্বশেষ মুহাম্মদ সাঃ।এদের পর আর কোনো নবী-রসূল আসবেন না।

আল্লাহর কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান
আল্লাহ তায়ালা মানব ও জিন জাতির হেদায়েত এর জন্য নবীদের মাধ্যমে তার বাণী পৌঁছে দিয়ে থাকেন।এই বাণী ও আদেশ নিষেধের সমষ্টিকে বলা হয় কিতাব।এক বর্ণণা মতে ১০৪ খানা কিতাব রয়েছে। তার মধ্যে ৪ খানা বড়।এদের আসমানি কিতাব বলা হয়।
সেগুলো হল

১.তাওরাত
২.যাবুর
৩.ইঞ্জিল
৪.কুরআন

আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস
আখিরাত বা পরকালের প্রতি বিশ্বাস করার অর্থ হল মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের উপর আস্থা।এ পর্যায়ে আমাদের নিম্নোক্ত  বিষয়ের উপর আস্থা রাখতে হবে

১.কবরের সওয়াল জওয়াব সত্য
২.কবরের আযাব সত্য
৩.হাশরের ময়দান সত্য
৪.আল্লাহর হিসাব নিকাশ সত্য
৫.নেকী ও বদীর ওজন সত্য
৬.আমলনামার প্রাপ্তি সত্য
৭.হাউযে কাওসার সত্য
৮.পুলসিরাত সত্য
৯.শাফা'য়াত সত্য
১০.জান্নাত-জাহান্নাম সত্য

তাকদিরের প্রতি ঈমান
তাকদির অর্থ পরিকল্পনা। ভাল মন্দ সবকিছু হয় আল্লাহর তরফ থেকে এটিই তাকদির।কুরআনে কারীমে রয়েছে
"তোমরা অনেক কিছুকে খারাপ মনে কর,আসলে সেটা খারাপ নয়।আবার অনেক কিছুকে ভাল মনে কর আসলে সেটা খারাপ"

উপরোক্ত বিষয়বস্তুর মধ্যে যেকনো একটি অবিশ্বাস করলে সে কাফির হয়ে যাবে (ঈমান ভঙ্গের কারণ)


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সগীরা গুনাহ,সগীরা গুনাহের বিবরণ, সগীরা গুনাহের তালিকা

গীবত কি,গীবতের প্রকারভেদ,গীবত সম্পর্কে কুরআনের আয়াত,গীবত সম্পর্কে হাদিস,গীবত কোন ক্ষেত্রে করা জায়েজ